বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয় যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বাংলাদেশের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস সংস্কৃতি ঐতিহ্য । চলুন তাহলে আজকে আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ১০ টি বাক্য জেনে নেই।
বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য – বাংলাদেশ সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
চলুন এক নজরে দেখে নেই আজকের এই আলোচনা থেকে আপনি কি কি জানতে পারবেন:
বাংলাদেশের ইতিহাস
বাংলাদেশের পতাকা
বাংলাদেশের মানচিত্র
বাংলাদেশের আয়তন রাজধানী এবং মুদ্রার নাম
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির নাম
বাংলাদেশের সামরিক শক্তি
বাংলাদেশের জাতীয় দিবস সমূহ
বাংলাদেশের ১০ টি দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের ১০ টি ঐতিহাসিক স্থান
বাংলাদেশ সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
লেখকের মতামত
বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য : বাংলাদেশের ইতিহাস
বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে পাকিস্তানের কাছ থেকে তখন থেকেই মূলত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। এর পূর্বে বাংলাদেশের রয়েছে কয়েক হাজার বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস। এই কয়েক হাজার বছরে বাংলাদেশকে অনেকগুলো রাজবংশ শাসন করেছে। যেমন:
নন্দ সাম্রাজ্য
মৌর্য সাম্রাজ্য
গৌড় সাম্রাজ্য
পাল রাজবংশ
খিলজী বংশ
মামলুক সালতানাত
শাহী রাজবংশ
ইলিয়াস শাহী রাজবংশ
হাবশী শাসন
হোসেন শাহী রাজবংশ
সূরী রাজবংশ
কররানী রাজবংশ
মুঘল সাম্রাজ্য
স্বাধীন বাংলার নবাবী শাসন
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য
পাকিস্তান
নন্দ সাম্রাজ্য
নন্দ সাম্রাজ্য ৩৪৫ খ্রিস্টপূর্ব থেকে 321 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল। মহা পদ্মনন্দ ছিলেন এ রাজ বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক। এই বংশের শাসনকালের সময় গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার ভারত বর্ষ আক্রমণ করেছিলেন।
মৌর্য সাম্রাজ্য
মৌর্য সাম্রাজ্য ৩২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল এই বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয় সম্রাট অশোককে। সম্রাট অশোকের আমলের বিভিন্ন শিলালিপি এখনো ভারত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জাদুঘরের সংরক্ষিত আছে।
গৌড় সাম্রাজ্য
গৌর সাম্রাজ্য ৩২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৫৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই অঞ্চলের রাজত্ব করে। গৌর সাম্রাজ্য বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে ৭৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টিকে ছিল। এই বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয় শশাঙ্ককে।
পাল রাজবংশ
৭৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৬১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা অঞ্চল তথা ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করে পাল রাজারা। এই রাজ বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক বলা হয় ধর্মপালকে। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ রচিত হয় পাল বংশের শাসকদের আমলে।
সেন রাজবংশ
১১৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন রাজবংশ টিকে ছিল ১২০৫ সাল পর্যন্ত এই বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক ধরা হয় রাজা লক্ষণ সেনকে। পরবর্তী সময়ে লক্ষণ সেনকে পরাজিত করে ১২০৫ সালে বাংলার শাসনভার গ্রহণ করেন তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ উদ্দিন বখতিয়ার খিলজী। খিলজির বাংলা বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ৫ জন ব্লগার কারা – বাংলাদেশের সেরা ব্লগিং কোম্পানি কোনটি
খিলজী বংশ
ইফতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে উপমহাদেশে খিলজী বংশের শাসন শুরু হয়। যদিও অভ্যন্তরীণ কোন দল এবং বক্তিয়ার খিলজীর মৃত্যুর কারণে খিলজী বংশ প্রেসিডেন্ট রাজত্ব করতে পারেনি বিক্ষিপ্ত ভাবে ১২২৫ সাল পর্যন্ত খিলজী বংশ বাংলা রাজত্ব করে।
মামলুক সালতানাত
১২২৫ সালে শেষ খিলজি সুলতান ইউ আজ খিলজির মৃত্যুর মাধ্যমে খিলজী বংশের পতনের পর মামলুকরা উপমহাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে। ১২৮০ সাল পর্যন্ত মামলুকরা বাংলার শাসন কার্য পরিচালনা করে।
শাহী রাজবংশ
১২৮০ সালের মামলুকের পতন ঘটলে বগুড়া খান সুলতান মাহমুদ শাহ নাম নিয়ে শাসন কার্য পরিচালনা শুরু করেন এবং তার প্রতিষ্ঠিত বংশ শাহী রাজবংশ নামে পরিচিত হয় ১২৮০ থেকে ১৩৪২ সাল পর্যন্ত শাহী রাজবংশ বাংলা শাসনভার পরিচালনা করে।
ইলিয়াস শাহী রাজবংশ
১৩৪২ সালে ইলিয়াস শাহ সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহনাম নিয়ে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলা সালতানাথের যাত্রা শুরু করেন। তার প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ 1487 সাল পর্যন্ত শাসন কার্য পরিচালনা করে
হাবশী শাসন
হাবশীরা মূলত ইলিয়াস সাহেব বংশের দাস ছিল। শেষ ইলিয়াস সাহেব সুলতান ফাতেহা কে হত্যা করে হাব সেরা বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করে। তারা ১৪৮৭ সাল থেকে ১৪৯৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ৭ বছর ক্ষমতায় ছিল।
হোসেন শাহী রাজবংশ
১৪৯৪ সালে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ হাফ সিদ্ধ সরিয়ে বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করেন এবং হোসেন শাহী রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৫৩৮ সালে শের শাহ কর্তৃক বাংলা দখলের পূর্ব পর্যন্ত হোসেন শাহী রাজবংশ বাংলার ক্ষমতায় ছিল।
সূরী রাজবংশ
১৫৩৮ সালে শেরশা কর্তিক বাংলা দখলের মাধ্যমে বাংলায় সুরী রাজবংশের যাত্রা শুরু হয় এ রাজবংশ ১৫৬৪ সাল পর্যন্ত বাংলা শাসন করে। ভাতৃ-ঘাতী সংঘাত এবং অভ্যন্তরীণ ক্রন্দলে ১৫৬৪ সালের টাচ খান কোরবানি কর্তৃক সুরই রাজবংশের পতন ঘটে।
কররানী রাজবংশ
১৫৬৪ সালে তাজ খান কররানী বাংলার ক্ষমতায় আসলে কররানী রাজবংশের যাত্রা শুরু হয়। ১৫৭৬ সালে মুঘল সম্রাট আকবরের আক্রমণে দাউদ খান কররানীর পরাজয়ের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা সালতানাতের পতন ঘটে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড,ফায়ার সার্ভিস এবং আনসার সম্পর্কে জানুন
মুঘল সাম্রাজ্য
১৫৭৬ সাল থেকে ১৭১৭ সাল পর্যন্ত বাংলায় মুঘল সাম্রাজ্যের শাসন চলে। এই সময় মুঘল সম্রাটদের নিযুক্ত সুবাদাররা বাংলা শাসন করেন। ইসলাম খান, মীর জুমলা, শায়েস্তা খান এসময়ে বাংলার বিখ্যাত সুবাদার ছিলেন।
স্বাধীন বাংলার নবাবী শাসন
১৭১৭ সালের দুর্বল মুঘল সাম্রাজ্য থেকে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মুরশিদ গুলি খান এবং স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে আলীবর্দী খান এবং সিরাজউদ্দৌলা বাংলার নবাব হন সিরাজউদ্দৌলার শাসনকালে ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মাধ্যমে বাংলা তার স্বাধীনতা হারায় এবং স্বাধীন বাংলার নবাবী শাসনের সমাপ্তি ঘটে।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মাধ্যমে উপমহাদেশের ব্রিটিশ ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন শুরু হয় এই কোম্পানি ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত উপমহাদেশ শাসন করে।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য
১৮৫৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয় এই বিদ্রোহের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন সমাপ্তি ঘটে এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সরাসরি বাংলা তথা উপমহাদেশের শাসনভার গ্রহণ করে 1947 সালে ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বাংলা সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে পরিচালিত হয়।
পাকিস্তান
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতনের মাধ্যমে উপমহাদেশে দুইটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের জন্ম হয় যার একটি পাকিস্তান এবং অপরটি ভারত। বাংলাকে মুসলিম প্রধান হয় পাকিস্তানের সাথে সংযুক্ত করা হয় এবং এর নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করে জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের।
বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
বাংলাদেশের আয়তন ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এবং বাংলাদেশের মুদ্রার নাম টাকা।
বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বাংলাদেশের ১৩ তম প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিচালনা করছেন।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে নতুন চুল গজানোর উপায় – কিভাবে নতুন চুল গজাবে
বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতির নাম জনাব মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন । তিনি বাংলাদেশের 22 তম রাষ্ট্রপতি। ২০২৩ সাল থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ এই পদে তিনি আসেন।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিধর একটি দেশ। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ব্যাঙ্কে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪০ তম। বাংলাদেশের সামরিক শক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন= বাংলাদেশের সামরিক শক্তি।
বাংলাদেশের জাতীয় দিবস সমূহ হল:
২১ শে ফেব্রুয়ারি- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
২৬ শে মার্চ-মহান স্বাধীনতা দিবস
১৫ই আগস্ট- জাতীয় শোক দিবস
১৪ই ডিসেম্বর- শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
১৬ ই ডিসেম্বর- মহান বিজয় দিবস
বাংলাদেশে বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। আজকে আমরা বাংলাদেশের দশটি দর্শনের স্থান সম্পর্কে জানব যে সকল স্থানে দর্শকরা বেশি ভ্রমণ করে থাকেন।
কক্সবাজার
সুন্দরবন
সেন্ট মার্টিন
সাজেক
কুয়াকাটা
শ্রীমঙ্গল
রাঙ্গামাটি
বান্দরবান
কাপ্তাই লেক
মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা
বাংলাদেশের ইতিহাস যেরকম সমৃদ্ধ বাংলাদেশে ঠিক সেরকম রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থান। আজকে আমরা বাংলাদেশের সেরা 10 টি ঐতিহাসিক স্থানের নাম জানব:
ষাট গম্বুজ মসজিদ
মহাস্থানগড়
পাহাড়পুর
কুসুম্বা মসজিদ
সোনামসজিদ
লালবাগ কেল্লা
বাঘা মসজিদ
সোনারগাঁও
নাটোরের রাজবাড়ী
কান্তজির মন্দির
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ যার আয়তন ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।
বাংলাদেশের পতাকার রং লাল এবং সবুজ।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা, মুদ্রার নাম টাকা।
বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি।
বাংলাদেশের আটটি বিভাগ এবং ৬৪ টি জেলা রয়েছে।
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক এবং কৃষি প্রধান দেশ।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৪৭০ মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মের অনুসারী বাকি ১০ ভাগ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে ১০ টি বাক্য জানলাম আশা করব আমাদের আলোচনাটি দ্বারা আপনার উপকৃত হবেন।
এ সংক্রান্ত আপনাদের যেকোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম প্রয়োজনীয় আরও তথ্য পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং গুগল নিউজে আমাদের পেজটিতে ফলো দিয়ে রাখুন। ধন্যবাদ।।