বাসর ঘর সাজানোর চমৎকার কিছু উপায়: 2024

বাসর ঘর সাজানোর চমৎকার কিছু উপায়:

সাজানো-গোছানো সুন্দর ঘরবাড়ি কে না চায়?

সারাদিন আপনি বাইরে যত ব্যস্তই থাকুন না কেন দিনশেষে নিজের বাড়িতেই আবার ফিরে আসতে হয়। নিজের ঘর, নিজেই বাড়িই আমাদের শেষ ঠিকানা। ঘরবাড়ি সাজানো-গোছানো থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে, কাজে ভালোভাবে মন বসে। আপনার বাড়ি-ঘর সুন্দরভাবে সাজানো থাকলে তা সবার সামনে আপনার সুরূচির পরিচয় তুলে ধরে।

এখনকার যুগে শুধু আত্মীয় আর বন্ধুরাই নয়, অল্প পরিচিত কিংবা অপরিচিতরাও আপনার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু ঝলক দেখতে পান প্রায়শই। ধরা যাক, আপনি আপনার পেশাগত জীবনের কাজের অংশ হিসেবে একটি অনলাইন মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন। দেশ-বিদেশের আরও অনেকেই সেই মিটিংয়ে উপস্থিত। এই অবস্থায় আপনার পেছনে যদি তাঁরা অগোছালো আসবাব আর কাপড়ের স্তুপ দেখতে পান তাহলে  আপনার সম্পর্কে কী ভাববেন? অপরদিকে তাঁরা যদি ব্যাকগ্রাউন্ডে একটি সাজানো সুন্দর ঘর দেখতে পান, আপনার সম্পর্কে তাদের ধারণা আরও উচ্চ পর্যায়ে পৌছে যাবে।

বাসর ঘর সাজানোর চমৎকার কিছু উপায়:

ঘর সাজানোর জন্য যে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন তা কিন্তু নয়। প্রয়োজন একটি সৃষ্টিশীল মন, প্রতিদিন একটু সময় বের করে কিছু কাজ করা আর সবসময় যত্নশীল থাকা।  আজ থাকছে কম খরচে ঘর সাজানোর কয়েকটি উপায়। 

ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন

বাসর ঘর সাজানোর চমৎকার কিছু উপায়:

ঘর সাজানোর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা। ঘরবাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা  আপনার ও আপনার পরিবারের সুস্বাস্থ্যের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাসার ফ্লোরগুলো প্রতিদিন ঝাড়ু দেওয়া, মোছা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে বাসায় ধুলাবালি জমতে পারে না, ঘরগুলো অনেকটাই ক্ষতিকর রোগজীবাণু থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হয়। মেঝে ছাড়াও বাসার দরজা,জানালা, দেয়াল ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। সিলিংয়ে জমে ওঠা ঝুল,মাকড়সার জাল ইত্যাদি রুটিনমাফিক  ফেলে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে ফ্যান এবং এসির দিকেও। ফ্যান ও এসির গায়ে জমে ওঠা ময়লা নিয়মিত  পরিষ্কার করা প্রয়োজন। আজকাল সিলিং ফ্যানগুলোকে নোংরা-ময়লা থেকে মুক্ত রাখতে ফ্যান কভার পাওয়া যায়। প্রয়োজনে সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন।  

 বাসার বাথরুম নিয়মিত টয়লেট ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।  বাথরুমের মেঝে, টয়লেট সিট, বেসিন, কল, টয়লেট পেপার হোল্ডারসহ সকল ফিক্সচারগুলো প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল, ব্রাশ ইত্যাদি ব্যবহার করে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। 

বিছানাগুলো ঘুমোতে যাবার আগে এবং ঘুম থেকে ওঠার পর একবার ঝাড়ু দেওয়া প্রয়োজন। বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কাঁথা ইত্যাদি নিয়মিত ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে।  এছাড়াও অন্যান্য ফার্নিচারের গায়ে জমে ওঠা ধুলোবালি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। বুকশেলফ এবং শেলফে রাখা  বইগুলোর গায়ে জমে থাকা ধুলো, দেয়ালে ঝুলানো শো-পিস ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। আপনার নিত্যদিনের সঙ্গী টিভিটাও কিন্তু ঘরের চেহারার একটি  গুরুত্বপূর্ণ অংশ। টিভির স্ক্রিনটাও নিয়মিত মুছে রাখতে হবে। আপনার বাড়িতে যদি ল্যাম্পশেড, অ্যাকুরিয়াম বা এধরনের কোনো ডেকোরেশন পিস থাকে সেগুলোকেও পরিষ্কার রাখা জরুরী। অ্যাকুরিয়ামের পানি নিয়মিত বদলাতে হবে। ময়লা পানি শুধু দেখতেই কুৎসিত নয়, মাছগুলোর জন্যও বিপজ্জনক। কোনো ইনডোর প্ল্যান্ট থাকলে সেগুলোরও নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন।     

ঘর গোছানো

বাসর ঘর সাজানোর চমৎকার কিছু উপায়:

ঘর সাজানোর পূর্বশর্তই হচ্ছে ঘর গোছানো। আপনি ঘর সাজানোর জন্য যত দামি ফার্নিচার, যত এক্সক্লুসিভ ডেকোরেশন পিসই ব্যবহার করেন না কেন, গুছিয়ে না রাখলে সেগুলোর কোনো সৌন্দর্য্যই থাকবে না। তাই বিছানা, টেবিল, সোফা ইত্যাদি সবসময় গুছিয়ে রাখুন। বিছানার চাদর, কাঁথা ইত্যাদি যেন এলোমেলো না হয়ে থাকে। পড়াশোনার পর বইগুলো সব গুছিয়ে যথাস্থানে রাখার অভ্যাস করুন। তা না হলে আপনার ঘর দেখতে অগোছালো তো লাগবেই, প্রয়োজনের সময় দরকারী বই-খাতা আপনি হাতের কাছে পাবেন না। কাপড়চোপড় এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে দেখতে খারাপ লাগে। কাপড় ভাঁজ করে আলমারিতে বা আলনায় গুছিয়ে রাখুন।  ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল ইত্যাদির ক্ষেত্রেও গোছগাছের একই নিয়ম মেনে চলতে হবে।  ঘর ছোট হলেও যদি সবকিছু পরিপাটিভাবে গোছানো থাকে তাহলে দেখতে সুন্দর লাগে। আবার অনেক বড় ঘর, দামি আসবাবপত্র থাকার পরেও যদি দেখা যায় বিছানা, টেবিল ইত্যাদি ওলট-পালট, চাদর, বালিশের কভারে ময়লা চিটচিট করছে,  জিনিসপত্র বিভিন্ন দিক থেকে উপচে পড়ছে তাহলে ওসব দামি আসবাবপত্র থাকাই বৃথা।  

ঘর গোছানোর কাজটি আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ে যদি আপনার বাড়িতে কোনো বাচ্চা থাকে। বাচ্চার খেলনা এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং গোছাতে হবে। খেলনাপাতি এলোমেলো হয়ে থাকলে শুধু ঘরের চেহারাই খারাপ দেখায় না, পায়ের তলায় লিগো কিংবা মার্বেলের মত ছোট ছোট জিনিস পড়ে মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

নিজের শখকে কাজে লাগান বাসর ঘর সাজানোর চমৎকার কিছু উপায়:

ধরা যাক আপনি চাইছেন আপনার ঘরের একটি দেয়ালকে সুন্দরভাবে সাজাতে। কিন্তু কী দিয়ে সাজাবেন ভেবে পাচ্ছেন না।  আপনি ছবি আঁকতে ভালোবাসেন? ব্যস! তাহলে তো হয়েই গেল। আজই এঁকে ফেলুন সুন্দর একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য, ফুল কিংবা নিজের পছন্দের যেকোনো ছবি অথবা নকশা।  নিজের আঁকা ছবি দিয়েই দেয়ালটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে ছবি বাঁধাই করতে পারেন। একটা বাঁধাই করা পেইন্টিং বা ওয়ালম্যাট কিনতে আপনার যে টাকা খরচ হতো, তা কিন্তু বেঁচে গেল। শুধু আঁকা ছবিই না, আপনি যদি ফটোগ্রাফিতে আগ্রহী হন তাহলে আপনার ক্যামেরায়  তোলা সূর্যাস্তের দৃশ্য, সাগরপাড়ের সৌন্দর্য্য বা প্রিয় অন্য যেকোনো ছবিই হয়ে উঠতে পারে আপনার ঘর সাজানোর উপকরণ। আজকাল ইন্টারনেটেও কপিরাইট ফ্রি অনেক পেইন্টিং পাওয়া যায়। সেগুলো উন্নতমানের কাগজে কালার  প্রিন্ট করে ফ্রেমে বাঁধাই করে ব্যবহার করাও সম্ভব।  

যদি উপরের কোনোটিই আপনার পক্ষে করা সম্ভব না হয়ে থাকে, তাহলে আশেপাশের কোনো হস্তশিল্পের দোকান থেকে স্বল্পমুল্যে পছন্দমতো কিছু ছবি কিনে নিতে পারেন। 

শুধু ছবি আঁকাই নয়, আপনি যদি ক্রাফটিংয়ে আগ্রহি হন সেক্ষেত্রেও শখ করে আপনার নিজের হাতে  তৈরী করা জিনিসপত্র দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। এক্ষেত্রে ‘বেস্ট অফ ওয়েইস্ট’ অর্থ্যাৎ, পরিত্যাক্ত কাঁচামাল ব্যবহার করে আবার ব্যবহারের যোগ্য কোনো জিনিস তৈরীর ধারণা কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন, আপনার বাসায় হয়তো আচার বা জেলি খাওয়া হয়। সেই আচার বা জেলির খালি জারটিকে রং করে বা রং ছাড়াই পুরোনো লেইস, পুঁতি , দড়ি ইত্যাদি দিয়ে সাজিয়ে তৈরী করতে পারেন একটি ডেকোরেশন পিস। জারের ভেতর ছোট ছোট ইলেক্ট্রনিক ক্যান্ডেল দিয়ে জার লাইটও তৈরী করা যায়। এরকম পরিত্যাক্ত বা পুরোনো আরও অনেককিছুকেই নতুনভাবে কাজে লাগিয়ে ঘর সাজানো সম্ভব। যেমন কোল্ড ড্রিংক্সের প্লাটিকের বোতল, কাঁচের চুড়ি, পুরোনো কাগজ, বাজারের ব্যাগ, প্যাকিং বাক্স,  দইয়ের পাত্র ইত্যাদি আরও অনেককিছু। পুরোনো কাপড় জোড়া দিয়ে প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমেও তৈরী করে নিতে পারেন ঘর সাজানোর জন্য রংবাহারি পর্দা কিংবা ওয়ালম্যাট। যদি ভাল সেলাই বা জানেন তাহলে তো কোনো কথাই নেই! বেডকভার, টেবিলক্লথ,ওয়ালম্যাট থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনেককিছুই আপনি তৈরী করে নিতে পারবেন।   ইন্টারনেটে বিভিন্ন  টিউটোরিয়াল দেখে হাতের কাছে থাকা নানারকম উপকরণ দিয়ে আপনিও অনেককিছু বানিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। এতে কম খরচে ঘর সুন্দর লাগবে এবং আপনার মনও ভাল থাকবে। একেবারে এক ঢিলে দুই পাখি!

একটি নতুন জীবনের শুরুতে, বাসর ঘরকে সুন্দর ও রোমান্টিক করে তোলা সবারই ইচ্ছা। আসুন জেনে নিই কীভাবে আপনার বাসর ঘরকে সাজিয়ে তুলতে পারেন:

রঙের জাদু:

  • নরম রং: গোলাপি, হালকা নীল, বেগুনি, ক্রিম ইত্যাদি নরম রং বাসর ঘরকে রোমান্টিক ও শান্তিপূর্ণ করে তুলতে পারে।
  • এক রঙের ছায়া: একই রঙের বিভিন্ন ছায়া ব্যবহার করে আপনি ঘরে গভীরতা ও মাত্রা যোগ করতে পারেন।
  • এককালার দেয়াল: একটি দেয়ালে ভিন্ন রঙ ব্যবহার করে আপনি ফোকাল পয়েন্ট তৈরি করতে পারেন।

আলোর খেলা:

  • নরম আলো: মৃদু আলো বাসর ঘরকে আরামদায়ক করে তোলে।
  • ক্যান্ডেললাইট: মোমবাতির আলো রোমান্টিক মুহূর্তের জন্য আদর্শ।
  • স্ট্রিং লাইট: স্ট্রিং লাইট দিয়ে আপনি ঘরে একটি জাদুকরী স্পর্শ যোগ করতে পারেন।

ফুলের সৌন্দর্য:বাসর ঘর সাজানোর চমৎকার কিছু উপায়:

  • তাজা ফুল: তাজা ফুল ঘরে সুগন্ধ ছড়িয়ে দেয় এবং একটি সতেজ পরিবেশ তৈরি করে।
  • ফুলের টব: ফুলের টব ঘরে সবুজাভ ছোঁয়া যোগ করে।
  • ড্রাই ফ্লাওয়ার: ড্রাই ফ্লাওয়ার দিয়ে আপনি একটি অনন্য সাজসজ্জা তৈরি করতে পারেন।

সফট ফার্নিচার:

  • কমফোর্টেবল বেড: একটি আরামদায়ক বেড বাসর ঘরের প্রধান আসবাব।
  • সফ্ট কুশন: সফ্ট কুশন ঘরে আরামদায়ক বসার জায়গা তৈরি করে।
  • কারপেট: একটি নরম কারপেট ঘরে উষ্ণতা যোগ করে।

ব্যক্তিগত স্পর্শ:

  • ফ্রেম করা ছবি: আপনাদের প্রিয় ছবি ফ্রেম করে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখুন।
  • হ্যান্ডমেড কারুকাজ: হ্যান্ডমেড কারুকাজ ঘরে ব্যক্তিগত স্পর্শ যোগ করে।
  • মেমোরি বক্স: মেমোরি বক্সে আপনাদের স্মৃতিগুলি সংরক্ষণ করুন।

অতিরিক্ত টিপস:

  • সুগন্ধি: ঘরে সুগন্ধি ব্যবহার করে আপনি একটি রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি করতে পারেন।
  • মিউজিক: মৃদু সঙ্গীত বাসর ঘরকে আরও আরামদায়ক করে তোলে।
  • পড়ার জিনিসপত্র: একটি ভালো বই বা ম্যাগাজিন রাখুন।

মনে রাখবেন: বাসর ঘর সাজানোর সময় আপনাদের নিজস্ব পছন্দ ও স্বাদকে প্রাধান্য দিন।

আপনি কি আরও কোনো বিষয়ে জানতে চান?

  • আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট ধরনের সাজসজ্জা চান, তাহলে আমাকে জানাতে পারেন।
  • আপনার জন্য আমি আরও কিছু সুন্দর সাজসজ্জার আইডিয়া খুঁজে দিতে পারব।

এছাড়াও আপনি এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে পারেন:

  • থিম: আপনি কি কোনো নির্দিষ্ট থিমে আপনার বাসর ঘর সাজাতে চান? উদাহরণস্বরূপ, বিচ থিম, বন থিম, বা রোমান্টিক থিম।
  • বাজেট: আপনার বাজেট কত? এর ভিত্তিতে আপনি সাজসজ্জার জিনিসপত্র কিনতে পারবেন।
  • ঋতু: কোন ঋতুতে আপনি বিয়ে করছেন? ঋতুর সাথে মিলিয়ে আপনি ঘর সাজাতে পারেন।

কিছু অতিরিক্ত পরামর্শ:

  • প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন: কাঠ, পাথর, বাঁশ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে আপনি একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে পারেন।
  • আয়না ব্যবহার করুন: আয়না ঘরকে আরও বড় দেখাতে সাহায্য করে এবং আলোকে প্রতিফলিত করে।
  • পর্যাপ্ত জায়গা রাখুন: ঘরে যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

Leave a Comment