Joya 9

ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া সম্পূর্ণ অবৈধ এবং তা থেকে উপার্জিত অর্থ হারাম

জুয়া বলতে সে সকল খেলাকে বুঝানো হয় যাতে বাজি কিংবা হারজিতের প্রশ্ন রয়েছে। জুয়া যে ধরনেরই হোক না কেন তা হারাম।

আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া সম্পূর্ণ অবৈধ এবং তা থেকে উপার্জিত অর্থ হারাম।

‘‘হে ঈমানদারগণ! নিশ্চয়ই মদ (নেশাকর দ্রব্য), জুয়া, মূর্তি ও লটারীর তীর এ সব নাপাক ও গর্হিত বিষয়। শয়তানের কাজও বটে। সুতরাং এগুলো থেকে তোমরা সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকে। তা হলেই তো তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো এটিই চায় যে, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হোক এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও নামায থেকে তোমরা বিরত থাকো। সুতরাং এখনো কি তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকবে না?’’ (মা’য়িদাহ্ : ৯০-৯১)

উক্ত আয়াতে জুয়াকে শির্কের পাশাপাশি উল্লেখ করা, উহাকে অপবিত্র ও শয়তানের কাজ বলে আখ্যায়িত করা, তা থেকে বিরত থাকার ইলাহী আদেশ, তা বর্জনে সমূহ কল্যাণ নিহিত থাকা, এরই মাধ্যমে শয়তানের মানুষে মানুষে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা এবং আল্লাহ্ তা‘আলার স্মরণ ও নামায থেকে গাফিল রাখার চেষ্টা এবং পরিশেষে ধমকের সুরে তা থেকে বিরত থাকার আদেশ থেকে জুয়ার ভয়ঙ্করতার পর্যায়টি সুস্পষ্টরূপেই প্রতিভাত হয়।

জুয়ার অনেকগুলো নতুন-পুরাতন ধরন রয়েছে যা হাতেগুনে উল্লেখ করা সত্যিই কষ্টকর। সময়ের পরিবর্তনে আরো যে কতো ধরনের জুয়ার পথ আবিষ্কৃত হবে তা আল্লাহ্ তা‘আলাই ভালো জানেন। তবুও নিম্নে জুয়ার কয়েকটি ধরনের কথা উল্লেখ করা হলো:

ক. লটারি বা ভাগ্যপরীক্ষা। অর্থের বিনিময়ে কোন সংস্থা বা সংগঠনের প্রাইজ বন্ড খরিদ করে বেশি, সমপরিমাণ কিংবা কম মূল্যের পুরষ্কার পাওয়া অথবা একেবারেই কিছু না পাওয়া। এ পন্থা একেবারেই হারাম। চাই উক্ত লটারির অর্থ জনকল্যাণেই ব্যবহার হোক না কেন। কারণ, পরকালের সাওয়াব তো শরীয়ত নিষিদ্ধ কোন পন্থায় অর্জন করা যায় না।

খ. জাহিলী যুগে দশজন লোক একত্রে মিলে একটি উট খরিদ করতো। প্রত্যেকেই সমানভাবে উট কেনার পয়সা পরিশোধ করতো। কিন্তু জবাইয়ের পর তারা লটারির মাধ্যমে শুধু সাত ভাগই নির্ধারণ করে নিতো। আর বাকি তিনজনকে কিছুই দেয়া হতো না। এটি হচ্ছে জুয়ার প্রাচীন রূপ।

গ. কার্ডের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে জুয়া খেলা তো বর্তমান সমাজে খুবই প্রসিদ্ধ। যা ছোট-বড় কারোর অজানা নয়। শুধু এরই মাধ্যমে মানুষের কতো টাকা যে আজ পর্যন্ত বেহাত হয়েছে বা হচ্ছে তার কোন ইয়ত্তা নেই।

ঘ. এমন কোন পণ্য খরিদ করা যার মধ্যে অজানা কিছু পুরস্কার রয়েছে। কখনো পাওয়া যায় আবার কখনো কিছুই পাওয়া যায় না। তেমনিভাবে পণ্য খরিদের সময় দোকানদাররা গ্রাহকদের মাঝে কিছু নাম্বার বিতরণ করে থাকে। যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে লটারির মাধ্যমে অথবা লটারি ছাড়াই পুরস্কার ঘোষণা দেয়া হয়। তাতে কেউ পায় আবার অনেকেই কিছুই পায় না।

ঙ. সকল ধরনের বীমা কার্যকলাপও জুয়ার অন্তর্গত। জীবন বীমা, গাড়ি বীমা, বাড়ি বীমা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বীমা, বিশেষ কোন পণ্যের বীমা, সাধারণ বীমা ইত্যাদি। এমনকি বর্তমানে গায়ক-গায়িকারা কন্ঠস্বর বীমাও করে থাকে। বীমাগুলোতে ভবিষ্যতে ক্ষতিপূরণ সরূপ টাকা প্রাপ্তির আশায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা জমা রাখা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বস্ত্তর ক্ষতি সাধন হলেই ক্ষতি সমপরিমাণ টাকা পাওয়া যায়। নতুবা নয়। ক্ষতিপূরণ জমা দেয়া টাকা থেকে কম, উহার সমপরিমাণ অথবা তা থেকে অনেকগুণ বেশিও হয়ে থাকে।

চ. জায়িয খেলাধুলাসমূহ খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে পুরস্কার সম্বলিত হলে তাও জুয়ার অন্তর্গত। কিন্তু পুরস্কারটি তৃতীয় পক্ষ থেকে হলে তা অবশ্য জায়িয। তবে শরীয়তের কোন ফায়েদা রয়েছে এমন সকল খেলাধুলা পুরস্কার সম্বলিত হলেও তাতে কোন অসুবিধে নেই। আর ইসলাম বিরোধী খেলাধুলা তো কোনভাবেই জায়িয নয়। চাই তাতে পুরস্কার থাকুক বা নাই থাকুক

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *