ঢাকা জেলার ৫টি উপজেলার নাম
দোহার উপজেলা
দোহার বাংলাদেশের ঢাকা জেলার অন্তর্গত সর্বদক্ষিণের উপজেলা। আয়তন ও জনসংখ্যার বিবেচনায় ঢাকা জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা হিসেবেও পরিচিত (১২১.৪১ বর্গ কিলোমিটার)। দোহার উপজেলা ১৯১৭ সালের ১৫ই জুলাই প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একই বছরের ২১শে সেপ্টেম্বর গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবার পর ১৯১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে দোহার উপজেলা, তৎকালীন দোহার থানার কার্যক্রম শুরু হয়।
নবাবগঞ্জ উপজেলা, ঢাকা
নবাবগঞ্জের নামকরণ নিয়ে কোন লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে প্রচলিত জনশ্রুতি আছে – নবাবী আমলে নবাব ও তাদের অধীনস্থ কর্মচারী এবং সৈন্যরা মুর্শিদাবাদ থেকে নৌপথে নবাবগঞ্জের ইছামতি নদী হয়ে ঢাকা যাতায়াত করতো। তারা ইছামতি তীরবর্তী এই অঞ্চলে তাবু ফেলে বিশ্রাম নিত। এক সময়ে নবাবের কর্মচারীরা খাজনা আদায়ের স্বার্থে এই এলাকায় বসবাস করা আরম্ভ করে। এভাবে ধীরে ধীরে এই এলাকায় জনবসতি বাড়তে থাকে এবং শহর গড়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে নবাবী আমল থেকে এই এলাকাটি নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত হয়ে উঠে।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা
কেরানীগঞ্জ নামকরণের পেছনে যে দুটি সম্ভাব্য ঐতিহাসিক ঘটনাকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয় তার পেছনে ইতিহাস ভিত্তিক কোন শক্ত সমর্থন পাওয়া যায় না। নবাব শায়েস্তা খানের শাসনামলে নবাবের পাইক-পেয়াদা এবং কেরানীরা বুড়িগঙ্গার ওপারে থাকতেন। এজন্য ধারণা করা হয় এই কেরানীদের নামানুসারে কেরানীগঞ্জের নামকরণ হয়েছে। এছাড়া ভিন্ন একটি মত অনুসারে, মোগল আমলে ঢাকার তৃতীয় গভর্নর ইব্রাহীম খাঁনের দুজন কর্মচারী বুড়িগঙ্গার দক্ষিণ পাড়ে বসবাস করতেন। সে থেকে এ এলাকার নাম কেরানিগঞ্জ নামকরণ করা হয়। কেরানীগঞ্জ দ্বীপাকার বলে মোঘল আমলের এক পর্যায়ে এই স্থানের নাম হয় পারজোয়ার। কেরানীগঞ্জের উত্তর ও পূর্ব সীমান্তে রয়েছে বুড়িগঙ্গা, পশ্চিম- দক্ষিণ সীমান্তে রয়েছে ধলেশ্বরী। মোঘল আমলে ধলেশ্বরী নদীর নাম ছিল ঢল সওয়ার। জোয়ার শব্দের অর্থ অঞ্চল এবং পার শব্দের অর্থ তট। সম্ভবত এই জন্যই মোঘল আমলে এই এলাকার নাম রাখা হয়েছিল পারজোয়ার যা আজও কেরানীগঞ্জের ছোট একটি এলাকার নাম হিসেবে বিদ্যমান।
ঐতিহাসিকভাবে, ১৭৫৭ সালে শাসক পরিবর্তনের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী এবং তার এক খালা কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরাতে কারাবন্দী ছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় কৌশলগতভাবে বিশেষত গেরিলা যুদ্ধের ক্ষেত্রে কেরানীগঞ্জ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঢাকা শহরে পরিচালিত অধিকাংশ গেরিলা যুদ্ধ পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হয় কেরানীগঞ্জ থেকে এবং এজন্য অনেক মূল্যও দিতে হয়েছে। পাকিস্থানি সেনারা কোনাখোলা, বাস্তা, ব্রাক্ষ্মণকৃর্থ, ঘাটারচর, মনোহরিয়া, জয়নগর, গোয়ালখালি, খাগাইল ও খোলামোড়ার বহু বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। গেরিলারা পরবর্তীতে এখান হতে পাকিস্থানি সেনাদের ওপরে ব্যাপক গেরিলা আক্রমণ চালায়।
সাভার উপজেলা
”বংশাবতীর পূর্বতীরে সর্বেশ্বর নগরী
বৈসে রাজা হরিশ্চন্দ্র জিনি সুরপুরী।”
ছড়াটিতে বংশাবতী বলতে আজকের বংশী ও সেকালের বংশাবতী নদীকেই বুঝাচ্ছে। যার পূর্বতীরে সর্বেশ্বর নগরী। এই নগরীর রাজা হরিশ্চন্দ্র। এ সময় তাঁর রাজ্য ছিল সুখ শান্তিতে ভরপুর। এই সুখময় রাজ্য সর্বেশ্বর নগরীর অপভ্রংশই আজকের সাভার। আবার কারো কারো মতে ইতিহাস খ্যাত পাল বংশীয় রাজা হরিশ্চন্দ্রের সর্বেশ্বর রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল সম্ভার এবং সম্ভার নাম থেকেই সাভার নামের উৎপত্তি। সাভার অতি প্রাচীন স্থলভূমি। ঢাকার ইতিহাসে দেখা যায় ধলেশ্বরী এবং বংশী নদীর সঙ্গম স্থলে বংশী নদীর পূর্বতটে ঢাকা থেকে ১৩ মাইল বায়ু কোনে অবস্থিত সাভার। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত এই স্থান সম্ভাগ বা সম্ভাস প্রদেশের রাজধানী ছিল। ঢাকার ধামরাইয়ের উত্তর পশ্চিম কোনে সম্ভাগ নামে যে ক্ষুদ্র পল্লী আছে তা আজো সম্ভাগ প্রদেশের অতীত স্মৃতি বহন করে। বৌদ্ধ নৃপতিগণের শাসনাধীনে প্রাচীন সম্ভাগ তার বিপুল বৈভব ও প্রতাপে পরিপূর্ণ ছিল। সাভার বা সম্ভার নামের পূর্ব কথন বলে অনেক ঐতিহাসিক এই মতের সমর্থন করেন।
যেহেতু বৌদ্ধ আমলের অসংখ্য বৌদ্ধ ধ্বংসস্তুপ ও বৌদ্ধ মূর্তি সাভার এলাকার মাটির নিচে আবিস্কৃত হয়েছে এবং আজও হচ্ছে সেহেতু ধরে নেয়া যায় যে বৌদ্ধ শাসনামলে এই শহর গড়ে উঠেছিল। গৌতমবুদ্ধ অথবা মৌয্য বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট আশোকের সময়ও যদি এই রাজ্যের পত্তন হয়ে থাকে তবুও আজকের সাভারের বয়স দুই হাজার দুইশত বছরের অধিক। হরিশচন্দ্র পালই রাজা হরিশচন্দ্র নামে সাভারের সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজা হরিশচন্দ্রের রাজবাড়ী সাভারের পূর্বপাশে রাজাশন গ্রামের অবহেলিত এক কোনে মাটির নিচে চাপা পরে আছে। রাজাশনের আশপাশে লুপ্তপ্রায় বহু দীঘি, বৌদ্ধ স্থাপত্যের নিদর্শন রাজোদ্যান, খাল, পরিখা আজও কালের সাক্ষী হয়ে বিরাজমান। রাজার সেনানিবাস কোঠাবাড়ী সাভারের উত্তর পাশে অবস্থিত। রাজা হরিশ্চন্দ্রের এক রানী কর্ণবতীর নামে কর্ণপাড়া এবং অপর মহিষী ফুলেশ্বরীর নামে রাজফুলবাড়ীয়া সাভারের দক্ষিণে এক মাইল অন্তর অবস্থিত।
দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিজয় সেন পাল সাম্রাজ্যকে সমূলে ধ্বংস করে বাংলার সিংহাসনে বসেন। তার অত্যাচারে বৌদ্ধরা হয় মৃত্যবরণ করেন নতুবা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। কথিত মতে প্রাচীন সম্ভার রাজ্য ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। এ সময় এ স্থান স্বর্বেশ্বর নগরী নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং ধর্মান্তরিত অবস্থায় পাল বংশীয় লোকেরাই সাভার শাসন করতে থাকে।
ময়নামতির তান্ত্রিক মহারানীর পুত্র গোপীনাথের সঙ্গে হরিশচন্দ্র রাজার জেষ্ঠা কন্যা অনুদার বিয়ে এবং কনিষ্ঠ কন্যা পদুনাকে যৌতুক প্রদানের গল্প কাহিনী সাভারের অনেকের কাছেই শোনা যায়। হরিশচন্দ্রের দ্বাদশ পুরুষ শিবচন্দ্র রায় তার শেষ জীবন কাশী গয়ায় অতিবাহিত করে প্রয়াত হন। শিবচন্দ্রের একাদশ পুরুষ তরুরাজ খাং এর প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্র শুভরাজ ও যুবরাজ হুগলীতে চলে যান। তৃতীয় ও চতুর্থ পুত্র বুদ্ধিমন্ত ও ভাগ্যমন্ত পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাদের এক বংশধর সিদ্ধ পুরুষ খ্যাতি লাভ করেন এবং তার সমাধী কোন্ডা গ্রামে খন্দকারের দরগা নামে আজও বিদ্যমান।
আরব উপত্যকায় সমুদ্র উপকূলবর্তী সাবাহ রাজ্যের (অর্থাৎ আজকের ইয়েমেন) প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ব্যবসা বাণিজ্যে বিশ্বজোড়া নাম ছিল। গ্রিক ঐতিহাসিকদের বিবরণিতে জানা যায় সাবাহর ব্যবসায়ীরা চীন, জাপান এবং কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করতো। সেই সময় আজকের সাভার ছিল সমুদ্র উপকূলবর্তী নগর। আসা যাওয়ার পথে সাবাহর ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যতরীর নোঙ্গর ফেলতো সাভারের উপকূলে। সে সময় সাভার ‘সাবাহর’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ‘সাবাহর’ অর্থাৎ স্বয়ম্ভর নগরী যেখানে সবকিছু পাওয়া যায়। সম্ভার, সভর, সম্ভোগ, সাবাহ-উর সব কয়টি নামের অর্থ সাদৃশ্যপূর্ণ অর্থাৎ স্বয়ম্ভর, স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্ননির্ভরশীল। তাই ইতিহাস থেকে বলা যায় সাভার অতি প্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ এক অঞ্চল ছিল।
সাভারে সর্বপ্রথম শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করেন রাখালচন্দ্র সাহা। তিনি তাঁর পিতার নামে অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মাতার নামে ছেলেদের থাকার বোর্ডিং, কাকার নামে মহেশচন্দ্র দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সাভারের দানবীর নামে পরিচিত।
ঢাকা জেলার ৫টি উপজেলার নাম বংশাবতীর পূর্বতীরে সর্বেশ্বর নগরীবৈসে রাজা হরিশ্চন্দ্র জিনি সুরপুরী। ছড়াটিতে বংশাবতী বলতে আজকের বংশী ও সেকালের বংশাবতী নদীকেই বুঝাচ্ছে। যার পূর্বতীরে সর্বেশ্বর নগরী। এই নগরীর রাজা হরিশ্চন্দ্র। এ সময় তাঁর রাজ্য ছিল সুখ শান্তিতে ভরপুর। এই সুখময় রাজ্য সর্বেশ্বর নগরীর অপভ্রংশই আজকের সাভার। আবার কারো কারো মতে ইতিহাস খ্যাত পাল বংশীয় রাজা হরিশ্চন্দ্রের সর্বেশ্বর রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল সম্ভার এবং সম্ভার নাম থেকেই সাভার নামের উৎপত্তি। সাভার অতি প্রাচীন স্থলভূমি। ঢাকার ইতিহাসে দেখা যায় ধলেশ্বরী এবং বংশী নদীর সঙ্গম স্থলে বংশী নদীর পূর্বতটে ঢাকা থেকে ১৩ মাইল বায়ু কোনে অবস্থিত সাভার। খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত এই স্থান সম্ভাগ বা সম্ভাস প্রদেশের রাজধানী ছিল। ঢাকার ধামরাইয়ের উত্তর পশ্চিম কোনে সম্ভাগ নামে যে ক্ষুদ্র পল্লী আছে তা আজো সম্ভাগ প্রদেশের অতীত স্মৃতি বহন করে। বৌদ্ধ নৃপতিগণের শাসনাধীনে প্রাচীন সম্ভাগ তার বিপুল বৈভব ও প্রতাপে পরিপূর্ণ ছিল। সাভার বা সম্ভার নামের পূর্ব কথন বলে অনেক ঐতিহাসিক এই মতের সমর্থন করেন।যেহেতু বৌদ্ধ আমলের অসংখ্য বৌদ্ধ ধ্বংসস্তুপ ও বৌদ্ধ মূর্তি সাভার এলাকার মাটির নিচে আবিস্কৃত হয়েছে এবং আজও হচ্ছে সেহেতু ধরে নেয়া যায় যে বৌদ্ধ শাসনামলে এই শহর গড়ে উঠেছিল। গৌতমবুদ্ধ অথবা মৌয্য বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট আশোকের সময়ও যদি এই রাজ্যের পত্তন হয়ে থাকে তবুও আজকের সাভারের বয়স দুই হাজার দুইশত বছরের অধিক। হরিশচন্দ্র পালই রাজা হরিশচন্দ্র নামে সাভারের সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজা হরিশচন্দ্রের রাজবাড়ী সাভারের পূর্বপাশে রাজাশন গ্রামের অবহেলিত এক কোনে মাটির নিচে চাপা পরে আছে। রাজাশনের আশপাশে লুপ্তপ্রায় বহু দীঘি, বৌদ্ধ স্থাপত্যের নিদর্শন রাজোদ্যান, খাল, পরিখা আজও কালের সাক্ষী হয়ে বিরাজমান। রাজার সেনানিবাস কোঠাবাড়ী সাভারের উত্তর পাশে অবস্থিত। রাজা হরিশ্চন্দ্রের এক রানী কর্ণবতীর নামে কর্ণপাড়া এবং অপর মহিষী ফুলেশ্বরীর নামে রাজফুলবাড়ীয়া সাভারের দক্ষিণে এক মাইল অন্তর অবস্থিত।দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিজয় সেন পাল সাম্রাজ্যকে সমূলে ধ্বংস করে বাংলার সিংহাসনে বসেন। তার অত্যাচারে বৌদ্ধরা হয় মৃত্যবরণ করেন নতুবা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। কথিত মতে প্রাচীন সম্ভার রাজ্য ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। এ সময় এ স্থান স্বর্বেশ্বর নগরী নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং ধর্মান্তরিত অবস্থায় পাল বংশীয় লোকেরাই সাভার শাসন করতে থাকে।ময়নামতির তান্ত্রিক মহারানীর পুত্র গোপীনাথের সঙ্গে হরিশচন্দ্র রাজার জেষ্ঠা কন্যা অনুদার বিয়ে এবং কনিষ্ঠ কন্যা পদুনাকে যৌতুক প্রদানের গল্প কাহিনী সাভারের অনেকের কাছেই শোনা যায়। হরিশচন্দ্রের দ্বাদশ পুরুষ শিবচন্দ্র রায় তার শেষ জীবন কাশী গয়ায় অতিবাহিত করে প্রয়াত হন। শিবচন্দ্রের একাদশ পুরুষ তরুরাজ খাং এর প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্র শুভরাজ ও যুবরাজ হুগলীতে চলে যান। তৃতীয় ও চতুর্থ পুত্র বুদ্ধিমন্ত ও ভাগ্যমন্ত পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তাদের এক বংশধর সিদ্ধ পুরুষ খ্যাতি লাভ করেন এবং তার সমাধী কোন্ডা গ্রামে খন্দকারের দরগা নামে আজও বিদ্যমান।আরব উপত্যকায় সমুদ্র উপকূলবর্তী সাবাহ রাজ্যের (অর্থাৎ আজকের ইয়েমেন) প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ব্যবসা বাণিজ্যে বিশ্বজোড়া নাম ছিল। গ্রিক ঐতিহাসিকদের বিবরণিতে জানা যায় সাবাহর ব্যবসায়ীরা চীন, জাপান এবং কোরিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করতো। সেই সময় আজকের সাভার ছিল সমুদ্র উপকূলবর্তী নগর। আসা যাওয়ার পথে সাবাহর ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যতরীর নোঙ্গর ফেলতো সাভারের উপকূলে। সে সময় সাভার ‘সাবাহর’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ‘সাবাহর’ অর্থাৎ স্বয়ম্ভর নগরী যেখানে সবকিছু পাওয়া যায়। সম্ভার, সভর, সম্ভোগ, সাবাহ-উর সব কয়টি নামের অর্থ সাদৃশ্যপূর্ণ অর্থাৎ স্বয়ম্ভর, স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্ননির্ভরশীল। তাই ইতিহাস থেকে বলা যায় সাভার অতি প্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ এক অঞ্চল ছিল।সাভারে সর্বপ্রথম শিক্ষা ব্যবস্থার সূচনা করেন রাখালচন্দ্র সাহা। তিনি তাঁর পিতার নামে অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মাতার নামে ছেলেদের থাকার বোর্ডিং, কাকার নামে মহেশচন্দ্র দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সাভারের দানবীর নামে পরিচিত।
ধামরাই উপজেলা
ধামরাই উপজেলার ইতিহাস অনেক পুরোনো। ধামরাই থানা ১৯১৪ সালে গঠিত হয় এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৫ সালে।
এছাড়া ঢাকা জেলায় ২টি সিটি কর্পোরেশন আছে
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন
ঢাকা জেলার ৫টি উপজেলার নাম ১৮৬৪ সালের ১লা আগস্ট ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি’র সৃষ্টি হয়। তৎকালীন ঢাকার জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মিঃ স্কিনার পদাধিকারবলে ঢাকার চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৮৮৫ সালে সর্বপ্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান হন আনন্দ চন্দ্র রায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর হতে সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিই চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৭ সালের পৌরসভা অধ্যাদেশ জারি হবার পর হতেই চেয়ারম্যানের সাথে সাথে ওয়ার্ড কমিশানার নির্বাচিত হবার পদ্ধতি চালু হয়। ঐ অধ্যাদেশ বলে ১৯৭৮ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটিকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে পরিবর্তিত হয়।
২০১১ সালের ১৯শে নভেম্বর তারিখে জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) (সংশোধনী) বিল, ২০১১ সালের পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে বিভক্ত করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নামে স্বতন্ত্র দুইটি কর্পোরেশন গঠন করা হয়। তন্মধ্যে – ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৩৬টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ৫৬টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন
দক্ষিণ ঢাকা বুড়িগঙ্গা নদীতীরে অবস্থিত প্রায় সাতশত বছরের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বন্দর নগরী। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬০৮ সালে ঢাকায় রাজধানী স্থাপিত করেন। বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁ ঢাকার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। এই সময় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অট্টালিকা গড়ে ওঠা শুরু করে। নগরবাসীর কল্যাণে মোগল সুবেদারগণ কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেন যার মধ্যে চকবাজার থেকে সূত্রাপুরের লোহারপুল পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ইটের রাস্তা নির্মাণ, সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেনের মসজিদ নির্মাণ, ঢাকার বর্তমান কেন্দ্রীয় কারাগার যা একটি দূর্গ ছিল তা ইসলাম খান পুনঃনির্মাণ করেছিলেন। এই সময় শৌর্যবীর্যের দিক দিয়ে ঢাকা পৃথিবীর ১২তম অবস্থানে ছিল। ঢাকা জেলার ৫টি উপজেলার নাম
১৭৫৭ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করার পর ঢাকা নগরীর উন্নয়ন ব্যহত হয়। কোম্পানী নগরবাসীকে কোন সুযোগ সুবিধা না দিয়ে লুণ্ঠনে ব্যস্ত থাকে। এভাবেই কিছু সময় চরম অব্যবস্থাপনায় অতিবাহিত হয়। মোগল আমলে শহরের প্রশাসনিক কাজকর্ম যেমন: শান্তিরক্ষা, স্বাস্থ্যবিধি ও নৈতিক মানরক্ষাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব ছিল সরকারের। কিন্তু ১৭৭২ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর পুনর্বিন্যাসের ফলে একজন ইউরোপীয় ম্যাজিস্ট্রেট শহরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনোনীত হন। ১৮১৩ সালে ম্যাজিস্ট্রেট জেমস ওল্ডহ্যামের অনুরোধে সরকার গঠন করা হয়। ১৮২৩ সালে নগর উন্নয়নে গঠন করা হয় কমিটি অব ইমপ্রুভমেন্ট। এই কমিটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কাজ করে এবং ১৮২৯ সালের নভেম্বরে কমিটি ভেঙ্গে যায়। পরবর্তিতে ১৮৪০ সালে সরকার ‘ঢাকা কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করেন। যা ১৮৪০ থেকে ১৮৬৪ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এই কমিটির কোন উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কাজের কথা জানা যায়নি।
অবশেষে ১৮৬৪ সালের ১লা আগস্ট ঢাকা পৌরসভা স্থাপিত হয়। ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কমিটি অ্যাক্ট নামে আগস্ট মাসে গঠন করা হয় ‘ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কমিটি’। ১৮৬৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদাধিকার বলে মিউনিসিপ্যালিটির সভাপতি ছিলেন।
ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ করতেন লেফট্যানেন্ট গভর্নর, ডিভিশনাল কমিশনার, ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী প্রকৌশলী ও সিভিল সার্জন ছিলেন পদাধিকার বলে সভাপতি।
কমিশনারের সংখ্যা ছিল ১৪ থেকে ২৩ পর্যন্ত। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মি. স্কিনার পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান এবং ঢাকা কলেজের শিক্ষক জর্জ বিলার্ট ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান। প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন আনন্দ চন্দ্র রায়চৌধুরী ও ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন জনাব খান আব্দুল্লাহ।
১৮৮০ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে ঢাকার নবাব ও অন্যান্য ধনাঢ্য ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকায় পানি ও বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করা হয়। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোকে পৌরসভা বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছিল। পৌরসভার পাশাপাশি ছিল নবাবদের নিয়ন্ত্রিত পঞ্চায়েত। মহল্লার পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচিত হত সমাজের বিত্তবানরা। তাদের প্রধান কাজ ছিল সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা করা। ১৯৩২ সালে ঢাকা পৌরসভার জন্য নতুন অ্যাক্ট প্রবর্তন করা হয় যা ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলমান ছিল।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান যুক্ত হবার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা হল পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী। তখন ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ২ লক্ষ ৯৫ হাজার। প্রাদেশিক রাজধানীর পদমর্যাদা পাওয়ার পর ঢাকার গুরুত্ব বেড়ে যায়। ফলে শহরের পুনঃবিন্যাস অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে সরকার ঢাকা পৌরসভা বাতিল ঘোষণা করে। এরপর ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত পৌরসভায় কোন নির্বাচন না হওয়ায় সরকার মনোনীত ব্যক্তিবর্গই ঢাকা পৌরসভার কাজ পরিচালনা করতেন। ১৯৬০ সালে সরকার মিউনিসিপ্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স জারি করেন। এই অর্ডিন্যান্সে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের স্থলে সরকারি পদস্থ কর্মকর্তাকে মনোনয়নদানের আদেশ দেয়া হয়। তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদটি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্য থেকেই নির্বাচনের বিধি বহাল থাকে। ঢাকা পৌরসভা পূর্বে সাতটি ওয়ার্ডে বিভক্ত ছিল। পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ সালে সরকার এই পৌরসভার ২৫টি ইউনিয়নকে ৩০টি ইউনিয়নে বিভক্ত করে এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের ঢাকা পৌরসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তিকে মনোনীত কমিশনার বা সদস্য করা হয়। ১৯৬১ সালে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল ৫ লক্ষ ৫০ হাজার ১৪৩ জন।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সাথে সাথে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকা শহরের গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়। ১৯৭৪ সালে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল ১৬ লক্ষ হাজার ৪৯৫ জন। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা নগরীকে ৫০টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করে নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা পৌরসভা গঠন করা হয়। ১৯৭৮ সালে ঢাকা পৌরসভাকে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। পৌরসভার চেয়ারম্যান ঢাকা মিউিনিসিপ্যাল করর্পোরেশনের মেয়র নামে পরিচিতি পায়। এই সময় ৫০ জন নির্বাচিত কমিশনারসহ ৫ জন মনোনীত কমিশনার রাখার বিধান ছিল। ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত তৎকালীন মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল ৩৪ লক্ষ ৪০ হাজার ১৪৭ জন। ১৯৮২ সালে মিরপুর এবং গুলশান পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করর্পোরেশেনের আওতায় নিয়ে আসা হয় এবং ঢাকা নগরীকে মহানগরীতে রূপান্তরিত করা হয়। এর ফলে ওয়ার্ডের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬টি। আয়তন ও জনসংখ্যা বাড়তে থাকায় ১৯৮৩ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের দায়িত্বের পরিধি এবং ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫টি।
১৯৯০ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নাম পরিবর্তন করে ঢাকা সিটি করপোরেশন করা হয় এবং জনসেবার মান ও কার্যক্রম উন্নত ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ১০টি আঞ্চলিক কার্যাালয়ে বিভক্ত করা হয়। ১৯৯১ সালে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল ৬৮ লক্ষ ৪৪ হাজার ১৩১ জন। ১৯৯৪ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন ৭৫টি ওয়ার্ড থেকে ৯০টি ওয়ার্ডে উন্নীত হয় এবং প্রথম জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান হিসেবে জনাব মোহাম্মদ হানিফ মেয়র নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯০ জন ওয়ার্ড কমিশনারও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৯০ জন নির্বাচিত ওয়ার্ড কমিশনার ছাড়াও ১৮ জন মনোনীত মহিলা কমিশনারের বিধান ছিল। ২০০১ সালে সরকারি এক গেজেটে সংরক্ষিত আসনে মহিলা কমিশনারের সংখ্যা ১৮ থেকে বাড়িয়ে ৩০-এ উন্নীত করা হয়। তখন ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭ লক্ষ ১২ হাজার ২০৬ জন। ২০০২ সালে এমপি জনাব সাদেক হোসেন খোকা নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত মেয়র হন এবং ৩০টি মহিলা সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়। বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ। ঢাকা জেলার ৫টি উপজেলার নাম
নগরবাসীর সেবা সহজলভ্য করার বৃহত্তর স্বার্থে ২০১১ সালের ৩০শে নভেম্বর সরকার এক অধ্যাদেশে বলা হয় ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নামে দুইভাগে বিভক্ত করে দুইটি সেনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। ২০১৫ সালের ২৮ মার্চ মেয়র পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত জনাব মোহাম্মদ সাঈদ খোকন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। ৬ মে ২০১৫ সালে নবনির্বাচিত মাননীয় মেয়র শপথ গ্রহণ করেন।
ঢাকা জেলার ৫টি উপজেলার নাম
ঢাকাজেলারইতিহাস #ঢাকাজেলারনামকরণ #ঢাকাজেলা #ঢাকা #ঢাকাজেলারসকলতথ্য #ঢাকাজেলারপরিচিতি #ঢাকাজেলারথানাকয়টি #ঢাকাজেলারদর্শনীয়স্থান
Leave a Reply