পটুয়াখালী জেলা ৯টি উপজেলার নাম
কলাপাড়া উপজেলা
কলাপাড়া বা খেপুপাড়া বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। অনেকে একে খেপুপাড়া নামেও চেনেন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা এই উপজেলায় অবস্থিত।
খেপুপাড়ার একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে। বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলনের শুরুর দিককার উপজেলা খেপুপাড়া। সমবায়ের মাধ্যমে খেপুপাড়ায় ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম বায়ুচালিত ধান ভাঙ্গানো কল। খেপুপাড়ার সমবায়ীরা সেখানে আরও গড়ে তুলেছেন তেল কল, ম্যাচ ফ্যাক্টরি, ছাপাখানা, সিনেমা হল এবং আরও অনেক কিছু। খেপুপাড়ার সমবায় আন্দোলন এখন ঝিমিয়ে পড়েছে।
খেপুপাড়ায় দেশের চারটি রাডার স্টেশনের একটি অবস্থিত। ১৯৭৬ সালে খেপুপাড়ায় বিদ্যুত পৌছেছে। টেলিফোন সুবিধাও পৌছে গেছে একইসময়ে।
গলাচিপা উপজেলা
বার্মা রাজার অত্যাচারে বিতাড়িত রাখাইনদের একটি দল ১৭৮৪ সালে রাঙ্গাবালি দ্বীপে এসে বসতি স্থাপন করে। মূলত এই সময় কাল থেকেই এই অঞ্চল ধীরে ধীরে জনপদে রূপলাভ করে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পানপট্টি গ্রামে পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৮ মে পাকসেনারা চিকনিকান্দি ও ডাকুয়া গ্রামে হামলা চলিয়ে ২৯ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে এবং বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
দশমিনা উপজেলা
দশমিনা থানা গঠিত হয় ১৯৭৯ সালে,এর আগে এ উপজেলাটি বাউফল উপজেলার আওতাধীন ছিলো এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। ৭টি ইউনিয়ন, ৪৯টি মৌজা ৫৩টি গ্রামের সমন্বয়ে দশমিনা উপজেলা গঠিত।
পটুয়াখালী সদর উপজেলা
পটুয়াখালী শহরের বয়স প্রায় দেড়’শ বছর। এই নামের উৎপত্তি নিয়ে মতান্তর রয়েছে। কবে, কখন, কীভাবে পটুয়াখালী নামকরণ হয়েছিল তা বলা দুরূহ ব্যাপার। এ নামকরণ সম্পর্কে তেমন কোন দালিলিক প্রমাণ নেই। পটুয়াখালী নামকরণের ক্ষেত্রে মতভেদ থাকলেও অধিকাংশেই দেবেন্দ্র নাথ দত্তের পুরানো কবিতার সূত্র ধরে “পতুয়ার খাল” থেকে পটুয়াখালী নামকরণের উৎপত্তি বলে সমর্থন করেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে পর্তুগীজ জলদস্যুদের হামলা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন, অপহরণ ও ধ্বংসলীলায় বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের দক্ষিণাঞ্চল প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। এসময় বর্তমান পটুয়াখালী শহর এলাকা ছিল সুন্দরবন এবং নদীর উত্তর পাড়ে ছিল লোকালয়। উত্তর পাশের বর্তমান লাউকাঠী নদী ছিল লোহালিয়া ও পায়রা নদীর ভাড়ানী খাল। এই ভাড়ানী খাল দিয়েই পর্তুগীজ জলদস্যুরা এসে গ্রামের পর গ্রাম চালাত লুণ্ঠন ও অত্যাচার। এ খাল দিয়ে পর্তুগীজদের আগমনের কারণে স্থানীয়রা তৈরি করে অনেক কেচ্ছা ও কল্প কাহিনী। এর নাম তখন সবার মুখে মুখে পতুয়ার খাল। পরবর্তীতে এই পতুয়ার খাল থেকেই পটুয়াখালীর উত্পত্তি হয়। ১৯৮০ সনে শেরেবাংলা টাউন হলে অনুষ্ঠিত ‘পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক সেমিনারে অধিকাংশ বক্তা, প্রবন্ধকার ও ‘বরিশালের ইতিহাস’-এর লেখক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ এই মতকে সমর্থন করেন। পটুয়াখালী নামকরণের অপর দু’টি মত হচ্ছে এ অঞ্চলে একসময় পটুয়ার দল বাস করত। এরা নিপুণ হাতে মৃত্পাত্র তৈরি করে তাতে নানা ধরনের পট বা ছবির সন্নিবেশ ঘটাত। এই ‘পটুয়া’ থেকে ‘পটুয়াখালী’ নামের উত্পত্তি হয়ে থাকতে পারে। অথবা পেট-আকৃতির খাল বেষ্টিত এলাকাই হয়তো পেটুয়াখালী এবং পরে তা অভিহিত হয় পটুয়াখালী নামে। তবে শেষোক্ত অভিমত দু’টির কোনো জোরালো সমর্থন মেলেনি।
বাউফল উপজেলা
১৭৯০ খ্রিঃ লর্ড কর্নওয়ালিশ ভারত শাসন সংস্কার আইনে বাকেরগঞ্জ জেলাকে ১০টি থানায় বিভক্ত করেন। এর মধ্যে বাউফল থানা অন্যতম। তাছাড়া ১৮৬৭ সালের ২৭ মার্চ কোলকাতা গেজেটে পটুয়াখালী মহকুমা সৃষ্টির ঘোষণা প্রকাশিত হয়। এ মহকুমার অধীনে ৪টি থানার মধ্যে বাউফল অন্তর্ভুক্তও ছিল। পূর্বে এ এলাকায় ছিল অনেক ধরনের বৃক্ষাদি। এসব বৃক্ষাদির মধ্যে এক ধরনের গাছ জনসাধারণের কাছে বাউ গাছ নামে অত্যন্ত সুপরিচিত ছিল এবং ঐ গাছের নামানুসারে অত্র এলাকার নাম হয় বাউফল। আগা বাকের খাঁর শাসন আমলে দক্ষিণ বাংলার ইতিহাস অনুযায়ী অত্র এলাকার নাম বাউফল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৭৪ সালের আগস্ট মাসে যখন এখানে পুলিশ স্টেশন করা হয় তখন উক্ত নাম ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়।
থানা প্রতিষ্ঠার তারিখ: আগস্ট, ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দ।
উপজেলা প্রতিষ্ঠার তারিখ: ২ জুলাই, ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা
মির্জাগঞ্জ বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা সৃষ্টির ইতিহাস বহু পুরনো। জনশ্রুতি আছে যে, এখানে মির্জাদের জমিদারী এস্টেট ছিল। তারাই এই এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি ছিল। তাদের জমি-জমা চাষাবাদ করতো এতদ অঞ্চলের মানুষ। শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারে তাদের অনেক অবদান ছিল। মির্জারাই এ এলাকার মানুষের হ্রদয় স্থান পেয়েছিল। মির্জা আহমেদ জান বা মির্জাদের নাম অনুসারেই ধারণা করা হয় যে, মির্জাগঞ্জ নামকরণ করা হয়েছে। ১৮১২ সালে থানা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এর পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। ১৯৮৪ সালে উপজেলায় রুপান্তরিত হয়।
রাঙ্গাবালী উপজেলা
উপজেলার নামকরণ: রাঙ্গাবালী উপজেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে কথিত আছে যে, সাগর বক্ষে নতুন বালুচর সৃষ্টির ফলে কালের বিবর্তনে এই বালুচরের বালু লাল ছিল। এই ‘লাল’ শব্দটি আঞ্চলিক ভাষায় ‘রাঙ্গা’ নামে পরিচিত। এ থেকে ‘’রাঙ্গাবালী’’ নামের উৎপত্তি। ইতিহাসবেত্তাগন জানান, ১৭৮৪ সালে কতিপয় রাখাইন জনগোষ্ঠী আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। তখন থেকে এ অঞ্চলে জনবসতি শুরু হয়।
Leave a Reply